ফিশিং হ্যাকিং: ইন্টারনেটের একটি বড় হুমকি

প্রকাশিত: ১৯-০৬-২০২৫, ০৮:৫৮
phising

আধুনিক ডিজিটাল যুগে সাইবার অপরাধ দিন দিন বেড়েই চলেছে। এর মধ্যে ফিশিং হ্যাকিং (Phishing Hacking) একটি অন্যতম বিপজ্জনক পদ্ধতি, যার মাধ্যমে হ্যাকাররা ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য, পাসওয়ার্ড, ব্যাংক ডিটেইলস এবং অন্যান্য সংবেদনশীল ডেটা চুরি করে। এই আক্রমণ সাধারণত ইমেইল, মেসেজ বা জাল ওয়েবসাইটের মাধ্যমে করা হয়। আজ আমরা জানবো ফিশিং কী, এটি কীভাবে কাজ করে এবং কীভাবে নিজেকে সুরক্ষিত রাখা যায়।

ফিশিং কী?

ফিশিং হলো এক ধরনের সাইবার অপরাধ, যেখানে হ্যাকাররা নিজেদেরকে বিশ্বস্ত কোনো প্রতিষ্ঠান (যেমন ব্যাংক, সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানি বা অনলাইন সার্ভিস) হিসেবে ভুয়া পরিচয় দিয়ে ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হাতিয়ে নেয়। শব্দটি "Fishing" (মাছ ধরা) থেকে এসেছে, যেখানে হ্যাকাররা "টোপ" ফেলে ব্যবহারকারীদের তথ্য "ধরে"।

ফিশিং হ্যাকিং কিভাবে কাজ করে?

ফিশিং আক্রমণের কিছু সাধারণ পদ্ধতি হলো:

  1. ভুয়া ইমেইল বা মেসেজ: হ্যাকাররা ব্যাংক, পেমেন্ট সিস্টেম (যেমন PayPal, bKash), বা সোশ্যাল মিডিয়া (Facebook, Gmail) থেকে পাঠানো মতো দেখতে ইমেইল বা SMS পাঠায়। এতে একটি লিংক থাকে, যা ক্লিক করলে ব্যবহারকারীকে একটি জাল ওয়েবসাইটে নিয়ে যায়।

  2. জাল ওয়েবসাইট: এই সাইটগুলো আসল ওয়েবসাইটের মতো দেখতে হয়, যেখানে লগইন বা ব্যাংক ডিটেইলস দিতে বলা হয়। ব্যবহারকারী তথ্য দিলে তা হ্যাকারদের কাছে চলে যায়।

  3. সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং: হ্যাকাররা ফোন কল বা মেসেজের মাধ্যমে ব্যক্তিগত তথ্য নেওয়ার চেষ্টা করে। যেমন— "আপনার অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়েছে, দ্রুত পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করুন" এমন মেসেজ পাঠিয়ে বিভ্রান্ত করা হয়।

ফিশিংয়ের উদাহরণ

  • ফেক ফেসবুক লগইন পেজ: একটি লিংকে ক্লিক করলে Facebook-এর মতো একটি পেজ আসে, যেখানে ইউজারনেম ও পাসওয়ার্ড চাওয়া হয়।

  • ব্যাংক থেকে জরুরি মেসেজ: "আপনার অ্যাকাউন্টে সমস্যা হয়েছে, দ্রুত লগইন করুন" — এমন মেসেজ দিয়ে ভুক্তভোগীকে ধোঁকা দেওয়া হয়।

  • প্রাইজ বা লটারি স্ক্যাম: "আপনি ১০ লক্ষ টাকা জিতেছেন! দ্রুত আপনার ডিটেইলস দিন" — এমন মেসেজের মাধ্যমে তথ্য চুরি করা হয়।

ফিশিং থেকে কীভাবে সুরক্ষিত থাকবেন?

  1. অজানা লিংকে ক্লিক করবেন না: কোনো সন্দেহজনক ইমেইল বা মেসেজের লিংকে ক্লিক করার আগে ভালোভাবে যাচাই করুন।

  2. URL চেক করুন: ওয়েবসাইটের ঠিকানা (https://) এবং ডোমেইন নাম সঠিক কিনা দেখুন।

  3. টু-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন (2FA) ব্যবহার করুন: এটি অ্যাকাউন্ট সুরক্ষা বাড়ায়।

  4. এন্টি-ভাইরাস সফটওয়্যার ব্যবহার করুন: এটি ফিশিং ও ম্যালওয়্যার থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।

  5. কোনো অনলাইন ফর্মে ব্যক্তিগত তথ্য দেওয়ার আগে সতর্ক হোন: সরকারি বা বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট ছাড়া অন্য কোথাও তথ্য শেয়ার করবেন না।

ফিশিংয়ের শিকার হলে কী করবেন?

  • দ্রুত সংশ্লিষ্ট অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করুন।

  • ব্যাংক ডিটেইলস লিক হলে, ব্যাংককে জানান।

  • সাইবার ক্রাইম বিভাগে রিপোর্ট করুন (বাংলাদেশে সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন)।

উপসংহার

ফিশিং হ্যাকিং একটি মারাত্মক সাইবার হুমকি, কিন্তু সচেতনতা ও সঠিক সতর্কতা অবলম্বন করে এর থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। ইন্টারনেট ব্যবহারের সময় সন্দেহজনক কোনো কিছু দেখলে সতর্ক হোন এবং অন্যদেরও সচেতন করুন।

Do you like this article?

Yes No

বিজ্ঞপ্তি

আপনি এই ওয়েবসাইটটি ব্যবহার করছেন এর অর্থ হল: আপনি আমাদের ব্যবহারের শর্তাবলী মেনে নিয়েছেন।