নিশব্দ অথচ উপেক্ষিত এক পুরুষ প্রজনন সংকেত নিয়ে AST-এর আলোচনা। লিউকোস্পার্মিয়া (Leukospermia) – যখন বীর্যের ভেতরে নীরবে বাসা বাঁধে সংক্রমণের ছাপ
পিতা হওয়ার স্বপ্ন শুধু শুক্রাণুর উপস্থিতির উপর নির্ভর করে না—তার স্বাস্থ্য ও কার্যক্ষমতার উপরও নির্ভর করে। কিন্তু যদি সেই বীর্যের ভেতরে অজান্তেই ঢুকে পড়ে অনাহূত অতিথি—শ্বেত রক্তকণিকা (WBC)? যদি আপনার বীর্যপাতে অতিরিক্ত শ্বেত কণিকা থাকে, তবে সেটি ইঙ্গিত দেয় কোনো প্রদাহ বা সংক্রমণের। চিকিৎসা ভাষায় একে বলা হয় লিউকোস্পার্মিয়া বা পাইওস্পার্মিয়া। এটি এমন এক সমস্যা, যা সরাসরি প্রজনন ক্ষমতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে, অথচ প্রাথমিকভাবে পুরুষকে খুব একটা সতর্ক সংকেত দেয় না। (AST)
★ লিউকোস্পার্মিয়া আসলে কী?
লিউকোস্পার্মিয়া হলো এমন একটি অবস্থা যেখানে বীর্যের প্রতি মিলিলিটারে ১ মিলিয়নের বেশি শ্বেত রক্তকণিকা থাকে। স্বাভাবিক অবস্থায়ও সামান্য শ্বেত কণিকা থাকতে পারে, যা সংক্রমণ প্রতিরোধে সহায়তা করে। কিন্তু মাত্রা বেড়ে গেলে তা শুক্রাণুর গুণগত মান ও গতিশীলতার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। কারণ অতিরিক্ত শ্বেত কণিকা থেকে উৎপন্ন রাসায়নিক পদার্থ (Reactive Oxygen Species) শুক্রাণুকে অকালে ক্ষতিগ্রস্ত করে দেয়।
AAAয কারণসমূহ
১. প্রোস্টেট, সেমিনাল ভেসিকল বা এপিডিডাইমিসে ইনফেকশন
২. যৌনবাহিত রোগ (STI) যেমন ক্ল্যামাইডিয়া, গনোরিয়া
৩. মূত্রনালীতে দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ
৪. দীর্ঘ সময় যৌনসংসর্গ না করা (stagnation effect)
৫. প্রোস্টেট সার্জারি বা আঘাতের পরবর্তী প্রতিক্রিয়া
৬. কিছু ক্ষেত্রে অটোইমিউন প্রতিক্রিয়া (শরীর নিজের শুক্রাণুকে শত্রু মনে করে আক্রমণ করে)
★ কীভাবে বুঝবেন?
অনেক পুরুষের কোনো স্পষ্ট উপসর্গ থাকে না। তবে কিছু ক্ষেত্রে দেখা যেতে পারে—
১. বীর্যের রঙ হলুদাভ বা গন্ধ পরিবর্তন
২. বীর্যপাতের সময় বা পরে অস্বস্তি বা হালকা ব্যথা
৩. প্রস্রাবের সময় জ্বালা বা ব্যথা
৪. যৌন ইচ্ছা বা কর্মক্ষমতা কমে যাওয়া
যদিও এসব উপসর্গ থাকলেই যে লিউকোস্পার্মিয়া আছে, তা নয়—নিশ্চিতভাবে জানতে সিমেন অ্যানালাইসিস জরুরি।
★ কীভাবে নির্ণয় করা হয়?
প্রথমে সিমেন অ্যানালাইসিসে শ্বেত কণিকার সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়। প্রয়োজনে বিশেষ স্টেইনিং টেস্ট (Peroxidase Test) করা হয়। যদি সংখ্যা বেশি পাওয়া যায়, তবে ডাক্তার ইউরিন টেস্ট, প্রোস্টেট সিক্রেশন পরীক্ষা, কালচার টেস্ট ইত্যাদির মাধ্যমে সংক্রমণের উৎস খুঁজে বের করেন।
★ চিকিৎসা পদ্ধতি
১. অ্যান্টিবায়োটিক থেরাপি: ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ থাকলে উপযুক্ত ওষুধ ব্যবহার।
২. অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ড্রাগস: প্রদাহ কমানোর জন্য।
৩. জীবনধারা পরিবর্তন: যৌনস্বাস্থ্য বজায় রাখা, পর্যাপ্ত পানি পান, ধূমপান ও অ্যালকোহল বর্জন।
৪. সংক্রমণ প্রতিরোধ: কনডম ব্যবহার, অসুরক্ষিত যৌন সম্পর্ক এড়ানো।
৫. অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমানো: অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সাপ্লিমেন্ট (ভিটামিন C, E, জিঙ্ক) ব্যবহার।
★ সংসার জীবনে প্রভাব
লিউকোস্পার্মিয়া থাকলে গর্ভধারণের সম্ভাবনা কমে যায়, কারণ শুক্রাণু দুর্বল ও কম গতিসম্পন্ন হয়ে পড়ে। দীর্ঘদিন চিকিৎসা না নিলে এটি স্থায়ী বন্ধ্যাত্বের কারণ হতে পারে। তাই স্ত্রী গর্ভধারণে সমস্যায় ভুগলে পুরুষেরও সমানভাবে পরীক্ষা করানো জরুরি।
আপনি যদি সন্দেহ করেন আপনার দাম্পত্য জীবনে কিছু ভুল হচ্ছে, তাহলে নিজেকে লুকিয়ে রাখবেন না। আমরা সানন্দে আপনার সমস্যা শুনে সম্ভব্য সমাধান প্রচেষ্টা করব। নিজের দেহ ও সম্পর্ক—দুটোকেই ভালোবাসুন। সময় থাকতেই ব্যবস্থা নিন।
আপনি এই ওয়েবসাইটটি ব্যবহার করছেন এর অর্থ হল: আপনি আমাদের ব্যবহারের শর্তাবলী মেনে নিয়েছেন।