কাজী নজরুল ইসলাম: বিদ্রোহী কবি

প্রকাশিত: ১৯-০৬-২০২৫, ০৯:১১
kazi nuzrul islam

কাজী নজরুল ইসলাম বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির এক অবিস্মরণীয় নাম। তিনি শুধু কবি নন, একজন সংগীতজ্ঞ, সাহিত্যিক, সাংবাদিক এবং স্বাধীনতা সংগ্রামী। তাঁর বিদ্রোহী চেতনা, মানবতার বাণী এবং অসাম্প্রদায়িক দর্শন তাঁকে বাংলা সাহিত্যে এক অনন্য স্থান দিয়েছে। নজরুলের কবিতা, গান ও রচনা আজও মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে।

জন্ম ও শৈশব

কাজী নজরুল ইসলাম ১৮৯৯ সালের ২৫ মে (বাংলা ১১ জ্যৈষ্ঠ, ১৩০৬) পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম কাজী ফকির আহমেদ এবং মাতা জাহেদা খাতুন। দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেওয়া নজরুল শৈশবেই পিতাকে হারান এবং জীবিকার তাগিদে বিভিন্ন কাজ করতে শুরু করেন।

শিক্ষা ও সাহিত্যচর্চা

নজরুলের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা কম ছিল, কিন্তু তাঁর স্বশিক্ষা ও প্রতিভা ছিল অসাধারণ। মক্তবে কুরআন শিক্ষার পর তিনি লেটো দলে যোগ দেন, যেখানে গান ও কবিতা রচনা শুরু করেন। পরে তিনি ময়মনসিংহের ত্রিশালের দরিরামপুর স্কুলে কিছুদিন পড়াশোনা করেন।

সামরিক জীবন ও সাহিত্যিক যাত্রা

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় নজরুল সেনাবাহিনীতে যোগ দেন এবং করাচি সেনানিবাসে থাকাকালীন সাহিত্যচর্চা চালিয়ে যান। সেখানেই তিনি "বাউণ্ডুলের আত্মকাহিনী""মুক্তি"-র মতো রচনাগুলি লিখেন। যুদ্ধ শেষে তিনি কলকাতায় ফিরে আসেন এবং "বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য সমিতি"-র সাথে যুক্ত হন।

বিদ্রোহী কবি হিসেবে আত্মপ্রকাশ

১৯২২ সালে নজরুলের কবিতা "বিদ্রোহী" প্রকাশিত হলে তিনি সারা বাংলায় পরিচিতি লাভ করেন। এই কবিতায় তিনি বলেছিলেন—

"বল বীর—
বল উন্নত মম শির!"

তাঁর এই বিদ্রোহী সত্ত্বা ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রামে মানুষকে উদ্দীপ্ত করেছিল।

রচনাবলি ও সংগীত

নজরুলের উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ:

  • "অগ্নিবীণা" (১৯২২)

  • "সঞ্চিতা"

  • "ফণিমনসা"

  • "চক্রবাক"

তিনি অসংখ্য গান রচনা করেছেন, যা "নজরুলগীতি" নামে পরিচিত। তাঁর গানে হিন্দু-মুসলিম ঐক্য, প্রেম ও বিদ্রোহের কথা ফুটে উঠেছে।

স্বাধীনতা সংগ্রাম ও কারাবরণ

নজরুল "ধূমকেতু" পত্রিকা সম্পাদনা করে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে সরব হন। তাঁর রচনা "আনন্দময়ীর আগমনে"-র জন্য তাঁকে কারাবরণ করতে হয়। জেলে বসেও তিনি লিখেছেন—

"কারার ঐ লৌহকপাট—
ভেঙে ফেল কর রে লোপাট!"

অবদান ও স্বীকৃতি

নজরুলের সাহিত্যকর্ম তাঁকে "জাতীয় কবি"-এর মর্যাদা দিয়েছে। বাংলাদেশ তাঁকে "বিদ্রোহী কবি" হিসেবে সম্মান জানায় এবং ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ সরকার তাঁকে জাতীয় কবি হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।

ব্যক্তিগত জীবন

নজরুল ১৯২৪ সালে প্রমীলা দেবী-কে বিয়ে করেন। তাঁর দুই পুত্র— কাজী সব্যসাচী ও কাজী অনিরুদ্ধ।

অন্তিম জীবন

১৯৪২ সালে নজরুল পিক্স ডিজিজ-এ আক্রান্ত হন এবং কথা ও স্মৃতি হারিয়ে ফেলেন। ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট (১২ ভাদ্র, ১৩৮৩ বঙ্গাব্দ) তিনি ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। তাঁকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদ প্রাঙ্গণে সমাহিত করা হয়।

উপসংহার

কাজী নজরুল ইসলাম শুধু কবি নন, তিনি বাংলার মানুষের প্রেরণা। তাঁর বিদ্রোহ, মানবতা ও সংগ্রামী চেতনা আজও আমাদের পথ দেখায়। তিনি বলেছেন—

"গাহি সাম্যের গান—
মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান!"

নজরুলের জীবন ও সাহিত্য চিরকাল বাংলার মানুষকে অনুপ্রাণিত করবে।

Do you like this article?

Yes No

বিজ্ঞপ্তি

আপনি এই ওয়েবসাইটটি ব্যবহার করছেন এর অর্থ হল: আপনি আমাদের ব্যবহারের শর্তাবলী মেনে নিয়েছেন।