ব্ল্যাক হোল বা কৃষ্ণগহ্বর মহাবিশ্বের সবচেয়ে রহস্যময় ও বিস্ময়কর বস্তুগুলোর মধ্যে একটি। এটি এমন একটি স্থান যেখানে মহাকর্ষীয় শক্তি এতই প্রবল যে আলো পর্যন্ত তার টান থেকে বের হতে পারে না। বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্ব দ্বারা ব্ল্যাক হোলের অস্তিত্ব প্রথম অনুমান করা হয়েছিল, কিন্তু বাস্তবে এর অস্তিত্ব প্রমাণিত হয়েছে অনেক পরে। আজ আমরা জানবো ব্ল্যাক হোল কী, এটি কীভাবে তৈরি হয় এবং এর রহস্য সম্পর্কে।
ব্ল্যাক হোল হলো মহাকাশের এমন একটি অঞ্চল যেখানে পদার্থ অত্যন্ত ঘন অবস্থায় সংকুচিত হয়ে অতি শক্তিশালী মহাকর্ষীয় ক্ষেত্র সৃষ্টি করে। এই মহাকর্ষ এতটাই শক্তিশালী যে কোনো কিছু, এমনকি আলোও একবার এর মধ্যে পড়লে বের হতে পারে না। ব্ল্যাক হোলের সীমানাকে ইভেন্ট হরাইজন (Event Horizon) বলা হয়, যা হলো একটি কাল্পনিক সীমানা যার ভেতরে ঢুকে গেলে কোনো কিছুই ফিরে আসতে পারে না।
ব্ল্যাক হোল সাধারণত তৈরি হয় বিশালাকার নক্ষত্রের মৃত্যুর পর। যখন একটি বৃহদাকার নক্ষত্র (সূর্যের চেয়ে কমপক্ষে ২০-৩০ গুণ বড়) তার জ্বালানি শেষ করে ফেলে, তখন এটি একটি সুপারনোভা বিস্ফোরণের মাধ্যমে নিজেকে ধ্বংস করে। বিস্ফোরণের পর নক্ষত্রের কেন্দ্র অংশটি চূড়ান্তভাবে সংকুচিত হয়ে একটি ব্ল্যাক হোলে পরিণত হয়।
এছাড়াও, মহাবিশ্বের আদি অবস্থায় আদিম ব্ল্যাক হোল (Primordial Black Hole) তৈরি হতে পারে বলে ধারণা করা হয়, যা বিগ ব্যাং-এর পরপরই সৃষ্টি হয়েছিল।
ব্ল্যাক হোল সাধারণত তিন ধরনের হয়:
স্টেলার ব্ল্যাক হোল (Stellar Black Hole) – এটি সাধারণত মৃত নক্ষত্র থেকে তৈরি হয় এবং এর ভর সূর্যের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি হয়।
সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোল (Supermassive Black Hole) – এটি গ্যালাক্সির কেন্দ্রে অবস্থিত এবং এর ভর সূর্যের চেয়ে লক্ষ-কোটি গুণ বেশি হতে পারে। আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির কেন্দ্রে স্যাজিটেরিয়াস A* নামে একটি সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোল রয়েছে।
ইন্টারমিডিয়েট ব্ল্যাক হোল (Intermediate Black Hole) – এটি স্টেলার ও সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোলের মাঝামাঝি ভরের হয়।
অসীম ঘনত্ব: ব্ল্যাক হোলের কেন্দ্রে একটি বিন্দু থাকে যাকে সিঙ্গুলারিটি (Singularity) বলে, যেখানে পদার্থের ঘনত্ব অসীম এবং আয়তন শূন্য।
সময় বিকৃতি: ব্ল্যাক হোলের কাছে সময় ধীরে চলে। এটি আপেক্ষিকতা তত্ত্বের সময় প্রসারণের ফল।
হকিং রেডিয়েশন: বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং তত্ত্ব দিয়েছিলেন যে ব্ল্যাক হোলও শক্তি বিকিরণ করে এবং একদিন এটি বাষ্পীভূত হয়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে।
২০১৯ সালে ইভেন্ট হরাইজন টেলিস্কোপ (EHT) প্রকল্পের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো M87 গ্যালাক্সির কেন্দ্রস্থিত একটি সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোলের ছবি তোলা সম্ভব হয়েছিল। এটি ব্ল্যাক হোল গবেষণায় একটি যুগান্তকারী ঘটনা ছিল।
ব্ল্যাক হোল মহাবিশ্বের এক অদ্ভুত ও রহস্যময় সৃষ্টি। এটি আমাদের মহাকর্ষ, স্থান ও সময় সম্পর্কে গভীরভাবে বুঝতে সাহায্য করে। বিজ্ঞানীরা এখনও ব্ল্যাক হোল নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন, এবং ভবিষ্যতে এর আরও রহস্য উন্মোচিত হবে বলে আশা করা যায়।
আপনি এই ওয়েবসাইটটি ব্যবহার করছেন এর অর্থ হল: আপনি আমাদের ব্যবহারের শর্তাবলী মেনে নিয়েছেন।