নিউটনের সূত্র ভুল দাবি করলেন পঞ্চগড়ের আফসার

প্রকাশিত: ১২-০৮-২০২৫, ১০:৪০
newton's law mistake

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার আফসার আলী দাবি করেছেন, স্যার আইজ্যাক নিউটনের মহাকর্ষ সূত্র ভুল। তার মতে, নিউটনের গতির প্রথম সূত্র সঠিক হলেও অসম্পূর্ণ, দ্বিতীয় সূত্র পুরোপুরি সঠিক এবং তৃতীয় সূত্র কেবল কাল্পনিক যুক্তি।

জানা যায়, আফসার আলী (৬৫) দীর্ঘদিন বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনে (বিএডিসি) কর্মরত ছিলেন। ১৯৭৯ সালে চাকরি শুরু করে ১৯৯৬ সালে তিনি ইঞ্জিন চলাচলের একটি নতুন সূত্র আবিষ্কার করেন। তার ভাষায়, চক্রাকারে যান্ত্রিক কৌশলে জড়ের জড়তা ধর্ম, ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়ামুখী বলকে একই দিকে নিয়ন্ত্রণ করে পর্যায়ক্রমে গতি ও স্থিতি—এই দুই ধর্মে রূপান্তর করলেই স্থায়ী গতি শক্তি বা স্বয়ংক্রিয় যান্ত্রিক শক্তি উৎপন্ন সম্ভব।

নিউটনের সূত্র নিয়ে তার বিশ্লেষণ অনুযায়ী—প্রথম সূত্রে বাহ্যিক বলের উৎস ব্যাখ্যা নেই, তাই এটি অসম্পূর্ণ। দ্বিতীয় সূত্র—ভরবেগের পরিবর্তনের হার প্রযুক্ত বলের সমানুপাতিক—তার মতে সম্পূর্ণ সঠিক। তবে তৃতীয় সূত্র—প্রত্যেক ক্রিয়ার একটি সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে—তিনি এটিকে কাল্পনিক বলে দাবি করেন। আফসার আলীর মতে, আসল সূত্র হওয়া উচিত, প্রত্যেক ক্রিয়ারই একটি ঘর্ষণ, বাধা ও প্রতিক্রিয়া আছে। ঘর্ষণ, বাধা ও প্রতিক্রিয়া সমান হলে বস্তু স্থির থাকে, আর বাধাহীন পথে গতিশীল বস্তু নিজের জড়তার কারণে গতি বজায় রাখে।

নিজের গবেষণার অংশ হিসেবে তিনি একটি ইউ-আকৃতির সিলিন্ডার তৈরি করে পরীক্ষা চালান। এতে পানি ঢালার পর বায়ু আটকে গিয়ে চাপ সৃষ্টি হয়। চাপ মুক্ত হলে পানির পতনে শক্তি উৎপন্ন হয়, যা দিয়ে তিনি জ্বালানি বা বিদ্যুৎ ছাড়াই ইঞ্জিন চালানোর কৌশল উদ্ভাবনের চেষ্টা করছেন। এই পরীক্ষায় নিজের অর্থ ব্যয় করে একাধিক ছোট ডিজেল ইঞ্জিন কিনে কাজ করেছেন তিনি, যা করতে গিয়ে প্রায় নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন।

প্রায় ত্রিশ বছর ধরে তার গবেষণার ফল যাচাইয়ের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করলেও কেউ তা পরীক্ষা করেনি। আফসার আলী বিশ্বাস করেন, তার গবেষণা যাচাই হলে বিশ্বে অভিনব প্রযুক্তি উদ্ভাবন সম্ভব হবে।১৯৭৫ সালে জগদল হাই স্কুল থেকে এসএসসি পাস করে ১৯৭৮ সালে ঠাকুরগাঁও টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে দুই বছরের কোর্স সম্পন্ন করেন আফসার আলী। তিনি বহু প্রবন্ধ ও বই লিখেছেন, তবে সুযোগের অভাবে প্রকাশ করতে পারেননি। বর্তমানে তিনি সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় তার সূত্রের বৈজ্ঞানিক প্রমাণের সুযোগ চান।

 

 

আফসার আলী বলেন, রকেট চলে প্রতিক্রিয়ার বলে—এটা ভুল। আসলে রকেট চলে ভরবেগের কারণে, যা দ্বিতীয় সূত্র দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায়। আমার মতে, তৃতীয় সূত্র শুধু যুক্তি মাত্র, বাস্তব নয়। আমি যা বলেছি, সেটাই সঠিক।

 

 

তেঁতুলিয়া উপজেলা সদরের আজিজনগর দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ সারোয়ার হোসেন বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ের পাশেই আফসার আলীর বাসা। তিনি বেশ কিছুদিন ধরে নিউটনের গতিসূত্রের মধ্যে তৃতীয় সূত্রটি নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন এবং এটি ভুল ব্যাখ্যা করে আসছেন। তার মতে, এই সূত্রে কিছু অসংগতির বিষয় রয়েছে। জানা যায়, তিনি দীর্ঘদিন ধরে এ বিষয় নিয়ে নিজ উদ্যোগে গবেষণা করে যাচ্ছেন।

তিনি জানান, এর আগেও তিনি জ্বালানি ছাড়া কীভাবে পানি তোলা যায়, কিংবা জ্বালানি ছাড়া যন্ত্র চালানোর উপায় নিয়ে গবেষণা করেছেন, যদিও তাতে এখন পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য কোনো সাফল্য আসেনি। বর্তমানে তিনি নিউটনের তৃতীয় সূত্রের ব্যাখ্যা নিয়ে ভিন্নমত প্রকাশ করছেন, যা সত্যিই বোধগম্য নয়। কারণ এ সূত্রটিই আধুনিক বিজ্ঞানের অন্যতম ভিত্তি হিসেবে স্বীকৃত। তবে বিজ্ঞান প্রমাণনির্ভর। কোনো তত্ত্ব বা মতকে বিজ্ঞান তখনই গ্রহণ করে, যখন তা যথাযথভাবে পরীক্ষিত ও প্রমাণিত হয়।

তিনি বলেন, যদি আফসার তার দাবির পক্ষে যথাযথ প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেন, তাহলে সেটা অবশ্যই গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা যেতে পারে। যেহেতু তিনি বিষয়টি নিয়ে আন্তরিকভাবে কাজ করছেন, আমি মনে করি তাকে কিছু সুযোগ দেওয়া যেতে পারে—হোক তা সরকারি উদ্যোগে বা সমাজের উচ্চপর্যায় থেকে। হয়তো তাতে আমরা জানতে পারব, তার গবেষণায় কোনো নতুন দিক বা সত্যতা আছে কি না।

Do you like this article?

Yes No

বিজ্ঞপ্তি

আপনি এই ওয়েবসাইটটি ব্যবহার করছেন এর অর্থ হল: আপনি আমাদের ব্যবহারের শর্তাবলী মেনে নিয়েছেন।